নববর্ষ কি শুধুই বাঙালী জাতির উৎসব ?

Neaz
0

 বাংলা নববর্ষের সময় ঘনিয়ে আসলেই সামাজিক মাধ্যমে নববর্ষ পালন করা যাবে কিনা তা বিভিন্ন হুজুরের ওয়াজ শেয়ার করা হয়। প্রায় সকল বক্তার মতে নববর্ষ পালন মুসলমানদের জন্য জায়েজ নেই। কিন্তু আমরা আধুনিক তরুণ মুসলমানরা নববর্ষকে শুধুমাত্র বাঙালী জাতির ঐতিহ্যবাহী উৎসব বলে পালন করতে চায়। কিন্তু নববর্ষ কি শুধুই বাঙালী জাতির উৎসব ? না কি অন্য জাতি, হিন্দু ও অন্য কিছু ধর্মের পুজা পর্বণের সাথে এর কোন যোগ সদৃশ আছে?



বাংলা নববর্ষ


ইসলামে দৃষ্টিকোণ


প্রথমেই জেনে রাখা ভাল ইসলামে শীরক সব থেকে বড় গুনাহ। সুতরাং, শীরক সম্পর্কিত সকল উৎসব বড় গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। তাছাড়া সরাসরি হাদীস বলে

যারা বিধর্মীদের মত উৎসব করবে, কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর ঐ লোকদের সাথেই হবে। -আসসুনানুল কুবরা, হাদীস: ১৫৫৬৩

যুগ-যুগান্তরের নববর্ষ

সুতরাং, নববর্ষ যদি অন্য ধর্মের কোন উৎসব হয়ে থাকে তা হলে তা মুসলমানদের জন্য অবশ্যই বর্জনীয়। তাহলে এখন আমাদের প্রথম কাজ নববর্ষ ঠিক কবে থেকে শুরু হয়েছে সেটা খুঁজে বের করা। বলে রাখা ভালো যে, বাংলাতে সাধারণত নতুন ফসল ঘরে তোলে প্রক্রিয়াজাত করার পর একটি উৎসব প্রাকৃতিক কারণেই যুগ যুগ ধরে মানুষ পালন করে আসছে। এটাকে নববর্ষ, হালখাতা  ইত্যাদি বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়।  এটি আসলে একটি কৃষি উৎসব।  আর বাংলার মানুষ যেহেতু বেশিরভাগই কৃষিকাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে এসেছে তাই এটিকে সার্বজনীন উৎসর্গ বলা যেতে পারে।  তবে তা যদি বর্তমান যুগে এসে পুঁজিবাদীদের চাপিয়ে দেওয়া নববর্ষের সাথে তুলনা করেন তবে এই নববর্ষের সাথে যুগ যুগ ধরে চলে আসে নববর্ষের কোন মিল ই নেই। 

সম্রাট আকবরের নববর্ষ

এখন  খাতা-কলমে নববর্ষ প্রবর্তন হওয়ার ইতিহাস গুলো এক এক করে দেখা যাক। অনেকেই বলে থাকেন বাংলা নববর্ষের প্রবক্তা মুঘল সম্রাট আকবর কৃষি পণ্যের খাজনা আদায় করতে হিজরী পঞ্জিকার পরিবর্তে বাংলা বর্ষের প্রবর্তন করেন। আকবর বাংলা বর্ষের প্রবর্তন করেন ১৫৮৪ সালে অর্থাৎ হিজরী ৯৯১ সালে। এ সময় থেকেই অর্থাৎ ৯৯১  হিজরী সন থেকেই  বছরের গণনা চন্দ্র কেন্দ্রিক থেকে সূর্য কেন্দ্রিক এ পরিবর্তিত হয়। এ কারণেই ২০২৪ সালে এসে বাংলা সন ১৪৩১ (২০২৪-১৫৮৪=১৪৩১-৯৯১)। আর তার তারিখ-এ-এলাহীর ( বাংলা পঞ্জিকার নাম) বারো মাসের নাম ছিল কারবাদিন, আর্দি, বিসুয়া, কোর্দাদ, তীর, আমার্দাদ, শাহরিয়ার, আবান, আজুর, বাহাম ও ইস্কান্দার মিজ যা জ্যোতির্বিদ আমীর ফতুল্লাহ তৈরি করেন। 

ইতিহাসের অন্যান্য নববর্ষ সদৃশ উৎসব

আরেকটি ধারণা হচ্ছে, সম্রাট আকবরের অনেক আগেই বাংলা পঞ্জিকার প্রচলন ছিল আর তা মনে করা হয় ৭ম শতকের রাজা শশাঙ্ক যিনি বাংলা পঞ্জিকার উদ্ভাবক (কিন্তু এক্ষেত্রে বাংলা সনের হিসাব করলে প্রায় ১০০ বছরের  গরমিল পাওয়া যায়)।  আবার কোন কোন ঐতিহাসিকদের মতে, পহেলা বৈশাখ উৎসবটি ঐতিহ্যগত হিন্দু নববর্ষ উৎসবের সাথে সম্পর্কিত যা Vaisakhi (বৈশাখী ) ও অন্য নামে পরিচিত। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে একই দিনে এই উৎসব পালিত হয়। এই Vaisakhi-কে Baisakhi উচ্চারণও করা হয়। হিন্দু ও শিখগণ এই উৎসব পালন করে। আধুনিক নববর্ষ উদযাপনের খবর প্রথম পাওয়া যায় ১৯১৭ সালে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের বিজয় কামনা করে সে বছর পহেলা বৈশাখে হোম কীর্তন ও পূজার ব্যবস্থা করা হয়। এরপর ১৯৩৮ সালেও অনুরূপ কর্মকান্ডের উল্লেখ পাওযা যায়।

নিশ্চিত ভাবেই আধুনিক যুগে এসে নববর্ষ যেভাবে পালিত হয় তা যুগ যুগ ধরে চলে আসা বাঙালির উৎসব বললে কেবল ভুলই হবে। বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নববর্ষের উৎসব হিন্দু ধর্মের একটি আদি উৎসব এবং তা শুধু বাঙালীই নয় অন্য জাতিও অন্য নামে পালন করে। এমনকি এটাও জানা যায় যে ভারতের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নববর্ষের উৎসবগুলো হিন্দু বিক্রমী দিনপঞ্জির সাথে সম্পর্কিত। এই দিনপঞ্জির নামকরণ করা হয়েছে খ্রিস্টপূর্ব ৫৭ অব্দে বিক্রমাদিত্যের নাম অনুসারে। ভারতের গ্রামীণ বাঙ্গালি সম্প্রদায়ে ভারতের অনেক অঞ্চল ও নেপালের মত বিক্রমাদিত্যকে বাংলা দিনপঞ্জির আবির্ভাবের স্বীকৃতি দেয়া হয়।

এই মিশ্র ইতিহাসগুলো বিশ্লেষণ করে নববর্ষ কে অন্তত কেবল বাঙালী জাতির ঐতিহ্যবাহী উৎসব বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। আর বর্তমান যুগে আমরা যেভাবে নববর্ষকে পালন করি সেটা কেবল পুঁজিবাদীদের একটি লাভের  মাধ্যম ছাড়া আর কিছু বলা যায় বলে  মনে হয় না। এই জন্যই সব মুসলিম ধর্মীও বক্তা নববর্ষ পালন মুসলমানদের জন্য জায়েজ নেই বলে থাকেন। তবে আমরা যদি সেই আদি কৃষি নববর্ষকে ফিরিয়ে আনতে পারি তবে হয়তোবা সেই নববর্ষ পালনে কোন বাধা থাকবে না। 

নববর্ষ নিয়ে আমার মত

আমার নিজস্ব মত, আমি বাঙালী এটা কি শুধু নিরভর করে আমি কোন উৎসব পালন করব তার উপর? বাঙালী হয়ে আমি অন্য বাঙালীদের সহ্য করতে পারি না, রাস্তায় দেখা হলে এমন ভাবে মুখবিকৃতি করি যেন দিনটাই খারাপ গেলো, অন্য বাঙালীদের কোন উপকারে আসি না আর এক নববর্ষ পালন করে দাবি করি আমার মত বাঙালী নাই! অদ্ভুত!

বস্তুবাদী এই সব উৎসবে ইসলাম কখনো বিশ্বাস করে না। স্বজাতি প্রেম যদি থেকে থাকে জাতির উপকারে কাজে আসো, সৎ কর্ম কর অসৎ কাজে নিষেধ কর এতাই ইসলামের বিশ্বাস ।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!