একটি উদাহরণ
একটি উদাহরণ দেয়া যাক। ধরুন, আপনি সকালে একটি বাসে
করে আপনার কর্মস্থলে যাচ্ছেন। বাসের সবাই শান্তভাবে বসে আছে। কেউ পেপার পড়ছে, কেউবা এখনো একটু জিরিয়ে
নিচ্ছে। এই সময় একটি স্টেশন থেকে একজন বাবা, আর তার দুজন ছেলে বাসে উঠলো। বাসে উঠতেই তারা প্রচন্ড হইচই শুরু
করলো। সব যাত্রীদের বিরক্ত করা শুরু করল, এমনকি যিনি পেপার পড়ছিলেন তার পেপার ধরে টানাটানি শুরু করলো, যিনি ঘুমাচ্ছিলেন তাকেও
বিরক্ত করা শুরু করলো। কিন্তু তাদের বাবা চুপচাপ তার সিটে বসেছিলেন! বাচ্চাদের দিকে
তার কোন খেয়ালই নেই! এই পর্যন্ত শোনার পর আপনার মনে হতে পারে, ওই বাবা কতই না উদাসীন
তার ছেলেদের ব্যাপারে! এবং ছেলেগুলো কতই না চঞ্চল! বাবা তাদের বেয়াদব করে বড় করছে।
ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি
কিন্তু যেমনটি বলছিলাম; আপনি কেবল একটি দৃষ্টিভঙ্গি
থেকে বিষয়গুলো বিচার করছেন। এবার ধরুন আপনি ওই ছেলেগুলোর বিরক্তিতে অতিষ্ঠ হয়ে ওই
বাবাকে জিজ্ঞেস করলেন, কেন তিনি তার ছেলেদের শাসন করছেন না, শুধু তার ছেলেদের জন্য
পুরো বাসের সকল যাত্রীদের বিরক্ত হচ্ছে। ওই বাবা আপনার কথায় চমকিত হয়ে বললেন, “সত্যি তো!! তারা সকল
যাত্রীদের বিরক্ত করছে! আসলে, একটু আগে ওরা ওদের মায়ের মৃত্যু দেখেছে, আমি সত্যিই জানিনা কিভাবে
তাদের আমি শান্ত করতে পারি।“ এ কথা শোনার পর অবশ্যই আপনার মনে যে বিরক্তি ওই ছেলে দুটোর
আর তার বাবার প্রতি ছিল তার অনেকটাই প্রশমিত হয়েছে। ছেলেগুলোকে দেখে বিরক্তির বদলে
আপনার মনে ছেলে দুটোর প্রতি অদ্ভুত কারণে মায়ার জন্ম নিয়েছে। অবাক লাগছে তাই না?
Judgement Call vs Pre-Judgement Call
এখন অনেকেই প্রশ্ন তুলতে পারেন যে এইভাবে বিচার করলে
তো চোর বা খুনিদেরও অপরাধের পেছনে কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে আমার এই লেখাতে
আমি অবশ্যই Judgement Call নিয়ে কোন আপত্তি তুলছি
না। আমার আপত্তি ছিল Pre-Judgement Call নিয়ে। আমি বিশ্বাস
করতে পছন্দ করি যে, মানুষের মধ্যে অধিকাংশই ভালো,
আবার এটিও বিশ্বাস করি, অধিকাংশ মানুষের মধ্যে কিছু খারাপ দিকও আছে। তবে আমরা যদি শুধু
খারাপ দিকটার প্রতি নজর দিয়ে তাকে বিচার করি তবে তার ভালো দিকটা কেবল পর্দার আড়ালেই
থেকে যাবে।