বিশ্বকে দেখার দুটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টিকোণ

Neaz
0

আমাদের চারপাশের বিশ্বকে আমরা যেভাবে উপলব্ধি করি তা নির্ভর করে অনেকগুলো বিষয়ের উপর, যার মধ্যে রয়েছে আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা, জ্ঞান, বিশ্বাস, এবং মূল্যবোধ। তবে আমরা দুটি ভিন্ন দৃষ্টিকোণ দিয়ে বিশ্বকে দেখতে পারি।

"আমি সবকিছুই পাওয়ার যোগ্য" ফাঁদ

প্রথমটি হল "আমি সবকিছু পাওয়ার যোগ্য বা দাবীদার।" আমি নিরাপত্তা, ভাল আচরণ, একটি ভাল চাকরি, খ্যাতি এবং সবকিছুর দাবীদার। হতে পারে এই দৃষ্টিকোণটির কিছু ইতিবাচক দিক আছে কিন্তু এই দৃষ্টিকোণটির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতিবাচক প্রভাব হল যে যখনই আমি মনে করি যে অনেক কিছুর আমার প্রাপ্য, আমি যখন সেগুলির কোনো একটি না পাই তখন আমি অভিযোগ করতে শুরু করি। আমার মনে হয় আমি এখানে একজন ভিকটিম। যদি এটি বোঝা খুব কঠিন হয় তবে আমি একটি নির্দিষ্ট শ্রেণীর মানুষের উদাহরণ দিতে চাই যারা জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারেনি। তারা একটি পরজীবীর মতো যারা তাদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অন্যদের উপর নির্ভর করে। কিন্তু আপনি যদি তাদের কথা শোনেন তবে আপনি দেখতে পাবেন যে তারা কখনই তাদের অলসতা বা তাদের পূর্বকর্মকে তাদের দুর্দশার জন্য দায়ী করে না। তারা সবসময় তাদের অবস্থার জন্য অন্যদের দোষারোপ করবে। কারণ তারা মনে করে যে তারা তাদের জীবনের কোন লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রত্যেকের সাহায্যের দাবীদার এবং এমনকি সবার সাহায্যের সাথেও যদি তারা শুধুমাত্র তাদের অলসতার কারণে সেই লক্ষ্যটি অর্জন না করে তবুও তারা নিজেদের ছাড়া অন্য সবাইকে দোষ দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে



Two important perspective of life


"আমি সবকিছু পাওয়ার যোগ্য " দৃষ্টিভঙ্গির আরেকটি নেতিবাচক দিক হল যে এটি আমাদের পুঁজিবাদী বিশ্বের একটি "আদর্শ ভোক্তা" করে তুলবে। আমি যদি মনে করি যে আমি সবকিছুর যোগ্য তাহলে এটা ভাবাটা খুব স্বাভাবিক যে পৃথিবী আমাকে কেন্দ্র করেই ঘুরছে। এই চিন্তার কারণে আমি কখনই সুখী হতে পারব না যদিও আমার কাছে সুখী হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তারপর, আমি সুখ কেনা শুরু করব বা অন্তত কেনার চেষ্টা করব। আমি দামি নতুন পণ্য কিনব যা আমাকে কিছু মুহুর্তের জন্য কিছুটা আনন্দ দেবে কিন্তু শীঘ্রই তা মলিন হয়ে যাবে এবং আমি একটি নতুন পণ্যের জন্য যাব। অবশেষে, আমি দেখব যে এই পণ্যগুলি আমার জন্য আর সুখ কিনতে পারছে না তাই আমি মাদক, পর্ণ, ব্যভিচারের দিকে যাব যা ডোপামিন বাড়িয়ে আমাদের কিছু ক্ষণিকের আনন্দ দিতে পারে কিন্তু ডোপামিনের প্রভাব চলে যাওয়ার সাথে সাথে আমি আবার বিষণ্ণ হয়ে পড়ব। আমি এগুলোর প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ব এবং নিজেকে বস্তুবাদী জগতের একজন আদর্শ ভোক্তায় পরিণত করব।


কৃতজ্ঞতার দৃষ্টিকোণ


বিশ্বকে দেখার আরেকটি দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে যা মানুষকে একটি সভ্যতা হিসাবে টিকিয়ে রেখেছে এবং এই দৃষ্টিভঙ্গির জন্য মানুষ সেই সময়েও খুশি ছিল যখন মনোবিজ্ঞানের কোনও তত্ত্ব ছিল না। এবং পদ্ধতিটি হল 'সর্বদা কৃতজ্ঞতার অনুশীলন'। যখন আমি মনে করি যে আমি ধন্য কারণ আমি এই সুন্দর পৃথিবীতে একজন মানুষ হিসাবে আসতে পেরেছি, আমার বাবা-মা যারা শুধু জন্ম দেওয়ার জন্য যথেষ্ট কষ্ট পেয়েছেন তারা এখনও আমার এত যত্ন নিচ্ছেন যদিও খারাপ কিছু ঘটতে পারে। আমি একটি সুস্থ শরীর, সম্পদ, পরিবার এবং এমন অনেক কিছুর আশীর্বাদ পেয়েছি যা আমার পাওয়ার কথা ছিল না কারণ এই সব পাওয়ার জন্য আমার জন্মের আগে আমাকে কোনো যোগ্যতার পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয়নি। এই কৃতজ্ঞতা অনুশীলন আমাদের চিন্তাভাবনা গভীরভাবে পরিবর্তন করতে পারে। আমরা যদি মনে করি আমরা ধন্য তাহলেই কেবল আমাদের অন্যদের জন্য ভাল কিছু করার মানসিকতা তৈরি হবে। কৃতজ্ঞতা আমাদের দায়িত্বশীল মানুষ হতে সাহায্য করে।


দুটি দৃষ্টিকোণের মধ্যে ভারসাম্য

এখন একটি প্রশ্ন জাগতে পারে: আমি যদি কিছুর যোগ্য মনে না করতে পারি, তাহলে আমি কীভাবে নিজেকে একটি কঠিন কাজের জন্য অনুপ্রাণিত করব বা আত্মবিশ্বাস অর্জন করব? অন্যদিকে, কিছু অত্যাচারী ব্যক্তিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা দেখানো নিশ্চয়ই ঠিক নয়! আমার ব্যক্তিগত মত হল, আপনি যদি মনে করেন আপনি অনেক কিছু পাওয়ার যোগ্য, তাহলে আপনার সচেতন বা অবচেতন মনের কিছু অংশে অহং এর জন্ম নেয়। বড় চিন্তা করার জন্য অহংকার কখনই ভাল নয়। অত্যাচারী ব্যক্তিদের সম্পর্কে বলতে গেলে বলতে হয়, আপনার উচিত তাদের বিচারের মুখোমুখি করার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন জাগে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে আপনি কী পেলেন? প্রায় সব ধর্মই বিশেষ করে আব্রাহামিক ধর্ম একটি উপযুক্ত সমাধান নিয়ে এসেছে। আপনি পৃথিবীতে ভাল কাজ করবেন কিন্তু আপনি সবসময় এই পৃথিবী থেকেই পুরস্কারের আশা করবেন না বরং আপনি আপনার পরবর্তী জীবনে ঐ কাজ গুলোর জন্য বহুগুনে পুরস্কৃত হবেন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!