যুক্তরাজ্যর প্রধানমন্ত্রী, বর্ণবাদীদের অভিযোগ এবং আমাদের শিক্ষা

Neaz
0

 গ্রেট ব্রিটেন পেয়েছে তার নতুন প্রধানমন্ত্রী। BRIXIT এর পর এটি তৃতীয় দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী, তিনি পূর্বে অর্থমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ঐতিহাসিকভাবে ঋষি সুনাক হবেন যুক্তরাজ্যর প্রথম বারের মত এশিয়ান এবং অশ্বেতাঙ্গ এবং হিন্দু প্রধানমন্ত্রী। এছাড়াও তিনি বৃটেনের ইতিহাসে সর্বকনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেলেন। তিনি একজন প্রাক্তন ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকার এবং তার স্ত্রী দেশের সর্বোচ্চ ধনীদের তালিকার একজন। 

The UK Prime Minister


এখন স্বভাবতই যুক্তরাজ্যের সবাই ঋষি সুনাক এর শীর্ষস্থান দখল করায় খুশি নয়। এটি তার নীতি অথবা ব্যক্তিত্বের কারণে নয়।  বরং কিছু কিছু লোকের সমস্যা অন্য জায়গায়। অনেকের অভিযোগ তারা একজন অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তিকে তাদের শ্বেতাঙ্গ দেশের শীর্ষ নেতা হিসেবে বিশ্বাস করতে পারবেন না কারণ তাকে নিজেদের নেতা হিসেবে মনে হয় না! একবার ভেবে দেখুন, এই শ্বেতাঙ্গ ইংরেজরা এমন সব দেশ শাসন করতে চেয়েছিল যেখানে কেউ তাদের মত শ্বেতাঙ্গ ছিলনা। তারপরও এই শ্বেতাঙ্গরা “বাণিজ্য, সভ্যতা বিকাশ” এইসবের নামে শাসন এবং শোষণ করে গেছে কত  অশ্বেতাঙ্গ দেশ। শ্বেতাঙ্গ বর্ণবাদীদের একটি মজার বিষয় আপনারা সবসময় লক্ষ্য করতে পারবেন আর তা হল, তারা বলবে উপনিবেশ ঠিক ছিল কারণ এটি ছিল ব্যবসা, বিকাশ ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু তারা এর পক্ষে ততক্ষনই কথা বলবে যতক্ষণ না তারা অনুভব করে তারা অন্যদের দ্বারা উপনিবেশিত হচ্ছে। আর যেই মুহূর্তে তারা এটি অনুভব করে, তখনই তাদের মনে হয় কিছু করা উচিত এইসব অভিবাসীদের দূর করার জন্য,কারণ  তারা ব্রিটিশদের সকল অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে। তবে এটি তারা ভুলে যায় যে, একই কাজ তারাও পৃথিবীতে ২০০ বছর ধরে করেছে। 

সত্য কথা বলতে আমি এইসব বর্ণবাদী ব্রিটিশদের জন্য একটু করুনাই অনুভব করি। কারণ মনে রাখবেন ২০১৬ সালে তারা BRIXIT এর পক্ষে ভোট দিয়েছে যাতে ব্রিটেনে ইচ্ছামত অভিবাসীরা প্রবেশ করতে না পারে এবং ব্রিটেনকে কেবল শ্বেতাঙ্গদের দেশ রাখতে পারে। কিন্তু সেই ভোট সূচনা করলো সাত বছরের একটি বিপর্যয়, যার ফলশ্রুতিতে তাদের শীর্ষ নেতৃত্বের আসলো একজন অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি। শুধু শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে নয়, অনেকের অভিযোগ মাত্রা ছাড়িয়ে যায় যখন তারা সম্পূর্ণ এশিয়ান কিংবা সকল অশ্বেতাঙ্গ দের নিয়ে অভিযোগ করে। তাদের মতে এই সকল অশ্বেতাঙ্গ লোকেরা সম্পূর্ণ ব্রিটেন দখল করে নেবে, সকল ক্ষমতা তাদের হাতে চলে যাবে। কিন্তু আমার কাছে তাদের প্রশ্ন, "যদি তাদের হাতে সত্যিই সব ক্ষমতা চলে যায় তবে সমস্যাটা কোথায়? তোমরা কিসের ভয় পাচ্ছো?" তারা ভয় সম্পর্কে সবসময় কথা বললেও ভয়ের কারণ নিয়ে খুবই কম কথা বলে। তবে আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, তারা ভয় পায় সেই ক্ষমতার অপব্যবহারের যা তারা পৃথিবীজুড়ে অশ্বেতাঙ্গ ব্যক্তি দের প্রতি করেছিল, তারা ভয় পায় একটি বুমেরাংয়ের। 

অনেক কথা হল বৃটেনের শ্বেতাঙ্গ-অশ্বেতাঙ্গ আর বর্ণবাদীদের নিয়ে। এবার একটু আমাদের দিকে নজর দেয়া যাক। যুক্তরাজ্য নিয়ে এতক্ষণ যত বদনাম করা হলো তা কিন্তু একটি নির্দিষ্ট বর্ণবাদী শ্রেণীদের নিয়ে। যুক্তরাজ্য কিংবা তাদের সিস্টেম নিয়ে নয়। জেনে অবাক হবেন যে, যুক্তরাজ্যের অধিকাংশ লোকই এর বিপক্ষে। আমরা অনেক সময় অনেক গর্ব করি এটা বলি যে অমুক বাংলাদেশি গুগলের অনেক বড় পদে রয়েছে, অমুক বাংলাদেশি অমুক শহরের মেয়র। তবে আমাদের দেশে বিদেশিদের কোনো বড় পদে না থাকার চিন্তা না হয় বাদই দিলাম দেশের লোক বড় কোন কোম্পানিতে শুধু মেধার জোরে শীর্ষস্থানে পৌঁছানো সম্পূর্ণ অকল্পনীয়। আমাদের দেশের রাজনীতি বলেন আর বড় কোন কোম্পানিতে বলেন চলে কেবল পরিবার তন্ত্র। নিজের মেধা পরিশ্রম আর নিষ্ঠার জোরে ভিন্ন ধর্ম, ভিন্ন জাত কিংবা ভিন্ন কোন বংশের হওয়া সত্ত্বেও নির্দ্বিধায় শীর্ষ নেতা হওয়ার এই সিস্টেম বানানোর কথা এখনো হয়তো  আমরা চিন্তাও করতে পারবোনা।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!