ইসলামী দর্শনতত্ত্ব: রমজানের সিয়াম পালনে ইসলামী দর্শন -পর্ব ৩

Neaz
0

 শুরু হয়েছে পবিত্র রমজান মাস। যে মাস মহিমান্বিত, যে মাস আমাদের সামনে সুযোগ নিয়ে আসে জাহান্নামীদের তালিকা থেকে নাম কেটে জান্নাতিদের তালিকায় যুক্ত করার। এই রমজান মাসে পালন করা সিয়ামের মর্যাদা আল্লাহর কাছে এত বেশি যে, অন্য সকল ইবাদতের পুরস্কার এর বিষয়ে আল্লাহ সীমা নির্ধারণ করে দিলেও সিয়াম পালনকারীর পুরস্কার আল্লাহ নিজ হাতে দান করবেন। [ref 1] এই মাস দোয়া কবুলের মাস, এই মাস আল্লাহর কাছ থেকে রহমত, মাগফেরাত ও নাজাত অর্জন করে নেওয়ার মাস।  


Islamic philosophy



ইসলামে প্রতিটি ইবাদতের পেছনে আল্লাহর গভীর জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং ইবাদতের নিজস্ব তাৎপর্য রয়েছে। ইসলামে ইবাদত কেবল কতগুলো অনুষ্ঠান কিংবা রীতি নয় বরং প্রতিটি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহ আমাদের কিছু শিক্ষা দিয়ে থাকেন এবং আমাদের কিছু অভ্যাস গড়ে উঠে যা আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ইহজীবনে তাকওয়া এবং পরজীবনে জান্নাতের কাছাকাছি নিয়ে যায়। 


সিয়ামের পেছনে ইসলামের দর্শন কি?


আল্লাহ সিয়ামকে কেবল মুসলমানদের উপরই নয় বরং সকল নবীদের উম্মতের উপরে ফরজ করেছেন। [ref 2] তবে সিয়ামের পেছনে ইসলামের দর্শন কি? কেন আল্লাহ আমাদের উপর সিয়াম ফরজ করেছেন? 

সিয়াম শব্দের অর্থ বিরত থাকা। এই ইবাদতে মুসলমানদের এমন সব কাজ থেকে বিরত থাকতে হয় যা অন্য সময়ে করা বৈধ ছিল। সেই কাজ গুলো মুলত পানাহার এবং যৌন চাহিদা পূরণ। যদি আমরা গভীরভাবে চিন্তা করি তবে দেখব জগতের যাবতীয় খারাপ কাজে একটি বড় অংশের পেছনে কারণ থাকে পানাহার এবং যৌন আকাঙ্ক্ষা। এখন দেখি সিয়াম পালন করে একজন মুসলিম কিভাবে পানাহার এবং যৌন আকাঙ্ক্ষা ঘটিত পাপকর্ম গুলো থেকে দূরে থাকতে পারে। 


যদি একজন মুসলিম সিয়াম পালন করা অবস্থায় গোপনে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এমনকি প্রচন্ড ক্ষুধা থাকার পরও আল্লাহর ভয়ে পানাহার না করে, নিজের বিবাহিত স্ত্রী থাকার পরও আল্লাহর ভয়ে যৌন আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করা থেকে বিরত থাকার প্রশিক্ষণ একমাস ধরে পেয়ে থাকে তবে বছরের বাকি মাসগুলোতে চুরি, সুদ খাওয়া, ঘুষ খাওয়া ইত্যাদি পাপ যা মানুষ সাধারণত উত্তম পানাহারের জন্য করে থাকে এবং অশ্লীলতা, পরকিয়া, ব্যভিচার কিংবা চোখের যেনা যার মূল চালিকাশক্তি যৌন আকাঙ্ক্ষাকে চরিত্র করা সে সব পাপ থেকে একজন সিয়াম পালনকারীর বেঁচে থাকা কোন অবস্থাতেই কঠিন হবার কথা নয়। আমাদের এই জীবনে কোন না কোন সময় আমাদের কাছে গোপনে ঘুষ খাওয়ার সুযোগ আসবে, গোপনে যেনা করার সুযোগ আসতে পারে, সুদ খাওয়ার সুযোগ আসতে পারে, দুর্বলের উপর ক্ষমতা প্রদর্শনের সুযোগও আসতে পারে। তবে একজন মুমিন যে রমজান মাসে সিয়াম থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে, সিয়াম পালনের মাধ্যমে নিজেকে মুমিন রুপে প্রশিক্ষিত করে; সে সকল পাপ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও এমন কি প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও সে পাপ থেকে নিজেকে বিরক্ত রাখতে পারবে। এজন্যই আল্লাহ বলেন সিয়াম তোমাদের জন্য ঢালস্বরূপ [ref 3] এবং সকল উম্মতের জন্যই আল্লাহ সিয়ামকে ফরজ রেখেছেন।  


এক জন ইসলামিক দার্শনিকের দৃষ্টিভঙ্গি 


আবুল হাসান আলী হাসানী নদভী (রঃ) রমজান প্রসঙ্গে একটি অন্যরকম দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেন। তার বক্তব্য অনুসারে আমাদের জীবনে দুই ধরনের সিয়াম আছে, ছোট সিয়াম যা আমরা রমজান মাসে পালন করি এবং অন্যটি বড় সিয়াম যা একজন মুসলিম জীবনব্যাপী পালন করেন। রমজানের সিয়াম শুরু হয় সুবেহ-সাদিক থেকে আর জীবনের সিয়াম শুরু হয় সাবালক বয়সে পা দেওয়ার মাধ্যমে। রমজানে সিয়াম পালনরত অবস্থায় আমরা যেমন অনেক কিছু করতে পারি যেমন ঘুমানো, গোসল করা, চলাফেরা করা তেমনি জীবনের সিয়ামেও আমরা অনেক কাজ করতে পারি যেমন পার্থিব হালাল উপার্জন, বিবাহ করা, শিক্ষা গ্রহণ করা ইত্যাদি। রমজানের়ে সিয়ামে কিছু বিষয় নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি জীবনের সিয়ামেও হারাম উপার্জন, খারাপ আচরণ, অশালীনতা, মদ পান ইত্যাদি  কর্মকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। রমজানের সিয়াম শেষ হয় ইফতারের মাধ্যমে এবং ইফতারে রোজাদার ব্যক্তির জন্য থাকে তৃপ্তি এবং প্রশান্তি। যে সিয়াম পালন করে না সে ইফতার খেলেও রোজাদারের মতো তৃপ্তি অনুভব করতে পারে না। তেমনি জীবনের সিয়াম শেষ হয় মৃত্যুর মাধ্যমে আর জীবনের সিয়াম সঠিকভাবে পালনকারী ব্যক্তি ইফতার হিসেবে লাভ করে জান্নাত যেখানে রয়েছে অনন্ত প্রশান্তি। কিন্তু যে জীবনের সিয়াম সঠিকভাবে পালন করে সে বিশ্বাসী হয়ে মারা গেলে যদিও জান্নাতে প্রবেশ করবে কিন্তু তাকে ভোগ করতে হবে কঠিন শাস্তি এবং অপমান এবং মনে কখনোই সেই প্রশান্তি আসবে না যা আল্লাহ সিয়াম পালনকারী কে দেবেন।  তবে রমজানের রোজা জীবনের রোজার মধ্যে একটি পার্থক্য হল রমজানের সিয়াম ভেঙে গেলে তা আর জোড়া লাগানোর উপায় থাকে না কিন্তু জীবনের সিয়াম ভেঙে গেলেও তা জোড়া লাগানোর উপায় হচ্ছে অন্তর থেকে তওবা করা।  


রমজানের সিয়াম আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ আমাদের গুনাহ গুলোকে মাফ করিয়া নেওয়ার। রমজানে যেভাবেই হোক আমাদের নাজাতের পথ তৈরি করে নিতে হবে কেননা যে ব্যক্তি রমজানের মাস পেল অথচ তার গুনাহ গুলো কে মাফ করিয়ে নিতে পারল না সেই ব্যক্তিকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল অভিশাপ দিয়েছেন।[ref 4] পরের রমজান আমাদের ভাগ্যে আসবে কিনা জানা নেই তাই এখনই সুযোগ পরিবর্তন আনার। রমজান মাসে সিয়াম পালন করে যদি আমরা আমাদের জীবনের পরিবর্তন লক্ষ্য করি। বুঝতে পারি যে,আমার জীবন থেকে গোনাহের মাত্রা এই রমজানের পর অনেক কমে গিয়েছে তবেই আমরা সফলকাম।  

 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!