দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশে, বিশেষ করে বাংলাদেশ ও ভারতে, সামাজিক অগ্রগতি সত্ত্বেও পুত্র সন্তানের প্রাধান্য এখনও গভীরভাবে প্রোথিত। এই সাংস্কৃতিক ঘটনা শিক্ষাগত ও আর্থ-সামাজিক পটভূমি নির্বিশেষে বিদ্যমান, যেখানে গর্ভবতী মহিলারা প্রায়শই পুত্র সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য চাপের মুখোমুখি হন। পীর, ফকির বা দরবেশের কাছ থেকে আশীর্বাদ নেওয়ার মতো ঐতিহ্যগত রীতি এখনও প্রচলিত। পুত্র সন্তানহীন পরিবারগুলি প্রায়শই সামাজিক কলঙ্কের শিকার হয়, যা এই লিঙ্গ বৈষম্যের ব্যাপক প্রকৃতি তুলে ধরে।
সামাজিক প্রভাব এবং ক্ষতিকর অনুশীলন
পুত্র সন্তানের প্রতি সামাজিক গুরুত্বারোপ এতটাই প্রবল যে তা প্রায়শই পারিবারিক জীবনের অন্যান্য দিকগুলিকে ছাপিয়ে যায়। বিশেষ করে ঐতিহ্যগত পরিবেশে, পিতামাতারা পুত্রদের তাদের চূড়ান্ত সমর্থন ও উত্তরাধিকার হিসেবে দেখেন। কন্যা সন্তানের জন্ম প্রায়শই অস্থানে সহানুভূতির সাথে দেখা হয়, এমনকি শিক্ষিত মহলেও, যা পিতামাতাকে অযথা মানসিক চাপ ও সামাজিক চাপের মুখোমুখি করে। পুত্র সন্তানের এই পক্ষপাতিত্ব কিছু ক্ষেত্রে লিঙ্গ-নির্বাচিত গর্ভপাতের মতো উদ্বেগজনক অনুশীলনের দিকে নিয়ে গেছে, যার ফলে অনেক অঞ্চলে লিঙ্গ প্রকাশ পরীক্ষার উপর আইনি বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক বিশ্বাস
এই পক্ষপাতিত্বের শিকড় বংশ পরম্পরা ও পারিবারিক ক্ষমতার গতিশীলতা সম্পর্কিত গভীর বিশ্বাসে নিহিত। পুত্রদের পারিবারিক ঐতিহ্যের রক্ষক এবং পারিবারিক শক্তির বাহক হিসেবে দেখা হয়। পুত্র সন্তানহীন পরিবারগুলিকে প্রায়শই দুর্ভাগ্য বলে মনে করা হয়, যা ঐতিহাসিক অজ্ঞতার দিকে ফিরে তাকায়। কুরআন এই বৈষম্যমূলক মনোভাবের বিষয়ে উল্লেখ করেছে, কন্যা সন্তানকে অবমূল্যায়ন করার অনুশীলনকে দৃঢ়ভাবে নিন্দা করেছে।
আরব সংস্কৃতিতে 'আবতার' ধারণা
ঐতিহাসিকভাবে, আরব সংস্কৃতিতে 'আবতার' ধারণাটি সন্তানহীন ব্যক্তিদের, বিশেষ করে পুত্র উত্তরাধিকারীহীনদের বোঝাতো। এই শব্দটি নেতিবাচক অর্থ বহন করত, যা ঐতিহ্য বা ক্ষমতার অভাবকে বোঝাতো। এমনকি হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) মক্কার তাঁর বিরোধীদের কাছ থেকে এই ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছিলেন। তবে, ইসলামী শিক্ষা এই ধারণাগুলিকে চ্যালেঞ্জ করে, লিঙ্গ নির্বিশেষে সমস্ত মানব জীবনের সমান মূল্যের উপর জোর দেয়।
ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি: আনাস ইবনে মালিকের হাদিস
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) এর হাদিসে সূরা আল-কাউসারের প্রত্যাদেশ সম্পর্কে বর্ণনা এই বৈষম্যমূলক অনুশীলনের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী প্রতিবাদ তুলে ধরে। এটি দেখায় যে ঐশ্বরিক অনুগ্রহ পার্থিব সাফল্য বা ঐতিহ্যের মাপকাঠির উপর নির্ভরশীল নয়। নবী (সাঃ) কে 'কাউসার' (প্রাচুর্য) এর প্রতিশ্রুতি একটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে প্রকৃত মূল্য বিশ্বাস ও সৎকর্মে নিহিত, লিঙ্গ-ভিত্তিক পছন্দে নয়।
ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা ও সমতা গ্রহণ
এই ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি একটি গভীর বার্তা প্রদান করে: মানবিক বিচার ও সামাজিক চাপ ক্ষণস্থায়ী, যেখানে ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা চিরন্তন। এটি বিশ্বাসীদের আল্লাহর পরিকল্পনায় আস্থা রাখতে এবং পার্থিব মর্যাদা ও সম্পদের অস্থায়ী প্রকৃতি স্বীকার করতে উৎসাহিত করে। প্রবন্ধটি লিঙ্গ নির্বিশেষে সকল সন্তানকে সমানভাবে মূল্যায়ন করার গুরুত্ব এবং এই ধরনের সطাথিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গর্ব বা সমালোচনা থেকে বিরত থাকার উপর জোর দিয়ে শেষ হয়। এই দৃষ্টিভঙ্গি সমতা এবং সকল মানুষের অন্তর্নিহিত মর্যাদার ব্যাপক ইসলামী শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।