ওমর বিন খাত্তাবের (রাঃ) কৈশোরে শেখা একটি জীবন দর্শনঃ মানুষের ঐক্য এবং স্বতন্ত্রতার সমন্বয়

Neaz
0

 আমরা সকলেই ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা ওমর বিন খাত্তাবকে (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) একজন ন্যায় বিচারক, উত্তম শাসক এবং একজন সাহসী ব্যক্তি হিসেবেই জানি। তবে জীবন নিয়ে তার দর্শন, দূরদর্শিতা সম্পর্কে খুব কমই আলোচিত হয়। আজ আমি ওমর বিন খাত্তাবের (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) কৈশোর জীবনে শেখা একটি দর্শন সম্পর্কে বলব।


ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ)

ওমর বিন খাত্তাবের কৈশোর

ওমর বিন খাত্তাবের (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) কৈশোর জীবন খুবই কষ্টে পরিপূর্ণ ছিল কেননা তার বাবা (খাত্তাব) তাকে দিয়ে অনেক কঠিন পরিশ্রম করাতেন এবং স্নেহের কোন বালাই ছিল না ওমর কিংবা তার অন্য সন্তান দের প্রতি। এমনকি সামান্য ভুলই ওমরকে সহ্য করতে হতো বেদম প্রহার। সারাদিন কঠিন পরিশ্রমের পরও রাতে উট পাহারা দেয়ার জন্য তাকে বেশির ভাগ সময়ই ঘরের বাইরে রাত্রি যাপন করতে হতো। এমন এক রাত্রি যাপনের সময় একদিন তার ভাই এলেন তাকে সঙ্গ দেয়ার জন্য। তাদের সুখ-দুঃখের গল্পের মাঝেই ওমর বিন খাত্তাব (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) শুরু করলেন প্রকৃতি থেকে শিক্ষা নেওয়া দর্শন গুলো সম্পর্কে কথা বলা। 


ওমর বিন খাত্তাবের জীবন দর্শন


খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন, “খোলা আকাশের নিচে জীবন আমাদের সুযোগ দেয় চিন্তার স্বচ্ছতাকে সামনে আনতে। এটি আমাদের দৃষ্টি শক্তি তীক্ষ্ণ করতে, মনের অনুভূতিগুলোকে শুদ্ধ করতে এবং একটি নিরঙ্কুশ সত্তা তৈরি করতে সাহায্য করে। 


যখন কোন রাখাল একপাল উটকে যথাযথভাবে লালন করতে শুরু করে তখন প্রতিটি উটকে সে আলাদাভাবে চিনতে পারে, প্রতিটি উটের নিজস্ব মেজাজ, আচরণ, চাহিদা এবং ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত থাকে। সেই রাখাল জানে যদিও উটগুলো একটি পালের মধ্যে থাকে কিন্তু প্রতিটি উটেরই আছে একটি নিজস্বতা। তাই একজন সচেতন রাখাল উটগুলোকে একটি পাল হিসেবে পরিচালনা করলেও প্রতিটি উটের দেখাশোনা আলাদাভাবে করে। রাখাল প্রতিটি উটের প্রতি ততটাই সদয় হয় যেমনটা একজন মা তার সন্তানদের প্রতি। 


উটের ক্ষেত্রে এই দর্শন প্রযোজ্য হলে মানুষের ক্ষেত্রে তা আরো স্পষ্টভাবে প্রযোজ্য। মানুষের জীবন সঠিকভাবে বিকশিত হতে পারে না যদি তাদের সকল বিষয়গুলো পরিচালনা করার জন্য একজন যোগ্য নেতা না থাকে। কিন্তু যে তার বিদ্রোহ করে সে ধ্বংস হয় কেননা একটি নেকড়ে শুধুমাত্র একটি একাকি থাকা ভেড়াকেই আক্রমণ করে। 


মানুষ একসাথে থাকলে নিজস্ব ব্যক্তিত্ব, আলাদা দক্ষতা এবং ভিন্ন চিন্তাধারা থাকবে এটাই স্বাভাবিক। প্রত্যেকেই তাদের ব্যক্তিগত উপায়, নিজের আগ্রহ এবং তার জন্য যা নির্ধারিত তার অনুসরণ করবে। কারো পক্ষে সম্পূর্ণরূপে অন্য আরেকজনকে প্রতিস্থাপন করা সম্ভব নয়। এমনটি না হলে মানুষের সমাজে বসবাস করার কোন দরকার হতো না, অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন হতো না। সুতরাং, একসাথে থাকাই হচ্ছে প্রত্যেকটি মানুষের স্বতন্ত্রতাকে বজায় রাখার উপায় এবং আর পার্থক্যগুলোই মানুষকে একত্রিত থাকতে বাধ্য করে। 


আল্লাহ তা’লা এই শিক্ষা ওমর বিন খাত্তাবকে (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) কৈশোর বয়সেই দান করেছিলেন। নবীজি (ﷺ) ইসলাম প্রচার করা শুরুর পর থেকে আবু জাহেল, আবু লাহাব, আবু সুফিয়ান এবং ওমর বিন খাত্তাব সহ অনেক কুরাইশ তার বিরোধিতা করতে শুরু করেন। তবে অন্যান্য কুরাইশ নেতা এবং ওমর বিন খাত্তাবের মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য ছিল। ওমর বিন খাত্তাব (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) নিজের বংশগত অহংকার কিংবা মক্কা থেকে পোত্তলিক ব্যবসাগুলো বন্ধ হওয়ার ভয়ে নবীজির (ﷺ) বিরোধিতা করেননি বরং ওমরের (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) ভয় ছিল ইসলাম প্রচারের কারনে কুরাইশদের একতার মধ্যে ফাটল দেখা দেবে। কিন্তু যখন তিনি ইসলামের গভীর সত্যতা এবং এর চুড়ান্ত উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারেন তখন ওমর বিন খাত্তাবও (رَضِيَ اللهُ عَنْهُ) ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!