ইসলামী দর্শনতত্ত্ব: ইসলামের সভ্যতা বিকাশের মূল চালিকাশক্তি-পর্ব ৫

Insightful Ink-walk
0

 গত পর্বে আলোচনা করেছিলাম ইসলামের দুটি গুরুত্বপূর্ণ cognition তৈরি করার প্রসঙ্গে। যার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে একজন দয়াময়, পরম করুণাশীল কিন্তু ন্যায় বিচারক সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু এই cognition তৈরি করা কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?


Islamic philosophy


মানুষের কিছু সহজাত প্রবিত্তি

মানুষ হয়ে জন্মগ্রহণ করার অনেক ভালো দিক যেমন রয়েছে তেমনি মানুষের কতগুলো সীমাবদ্ধতা ও রয়েছে। মানুষের সব থেকে বড় যে সীমাবদ্ধতা তা হচ্ছে মানুষ ভুল করে, সব সময় যে সে জেনে বুঝে ভুল করে তা নয়। অনেক সময়ই দেখা যায়, উদ্দেশ্য সৎ হবার পরও নিজের অজান্তেই ভুল করে বা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়।

ভুলের কারণে অনুশোচনা বোধ প্রবিত্তি


এই সকল ভুলের কারণে মাঝে মাঝে শুধু যে ভুল করে তারই নয় আরো অনেক মানুষেরই কষ্ট ভোগ করতে হয়। কিন্তু মানুষ হিসেবে জন্ম নেওয়ার আরও একটি সীমাবদ্ধতা হচ্ছে মানুষ যখন তার ভুল বুঝতে পারে তখন তার অনুশোচনা হয়। ছোটখাটো ভুল হলে হয়তো এই অনুশোচনা বোধ খুব বেশি তীব্র হয় না, তবে অনেক সময় দেখা যায় মানুষ তার কৃত কোন বড় ভুলের জন্য এত বেশি অনুশোচনা বোধে নিমজ্জিত হয়ে যায় যে নিজেকে অথর্ব, অযোগ্য ও এমন পাপিষ্ট মনে করতে থাকে যে সে চরম বিষন্নতায় নিমগ্ন হয়ে পড়ে। নিজেকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করার প্রয়াসে থাকে। জীবনটি তার কাছে অসহায়, ভালোবাসা বিহীন এবং অর্থহীন মনে হয়। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এর শেষ পরিণতি হয় আত্মহত্যা কিংবা প্রচন্ড মানসিক চাপে বিকারগ্রস্ততা। তবে যারা ভুল করে এবং তারপর অনুশোচনা করে তাদের জন্য ইসলাম মানসিক চাপ দূর করার অনন্য উপায় বলে দিয়েছে। ইসলামে তাদেরকেই সব থেকে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে যারা ভুল করে এবং পর অনুশোচনা করে এবং আল্লাহর পথে ফিরে আসে। আল কোরআনের বিভিন্ন আয়াত থেকে তার নির্দেশনা পাওয়া যায়।

আর যে কেউ মন্দ কার্য করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে, কিন্তু পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু-রূপে পাবে। [সূরা নিসা ১১০ আয়াত]

আল্লাহ এরূপ নন যে, তুমি তাহাদের মধ্যে থাকা অবস্থায় তিনি তাহাদেরকে শাস্তি দেবেন এবং তিনি এরূপ নন যে, তাহাদের ক্ষমা প্রার্থনা করা অবস্থায় তিনি তাহাদেরকে শাস্তি দেবেন। [সূরা আনফাল ৩৩ আয়াত]

যারা কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজেদের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করিতে পারে? এবং তারা যা [অপরাধ] করে ফেলে তাতে জেনে-শুনে অটল থাকে না। [সূরা আলে ইমরান ১৩৫ আয়াত]

 ইস্তিগফার ও তাওবার মাধ্যমে গুনাহ মাফ হওয়া প্রসঙ্গে একটি সহিহ হাদিসও পাওয়া যায় যা হয়তো আমাদের সকলের মনে গভীর প্রভাব রাখতে পারে।

মুহাম্মাদ ইবনু রাফি (রহঃ) ..... আবু হুরাইরাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে সত্তার হাতে আমার জীবন, আমি তার কসম করে বলছি, তোমরা যদি পাপ না করতে তবে অবশ্যই আল্লাহ তোমাদের নিশ্চিহ্ন করে এমন সম্প্রদায় বানাতেন যারা পাপ করে ক্ষমা চাইতো এবং তিনি তাদের মাফ করে দিতেন। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন ৬৭১২, ইসলামিক সেন্টার ৬৭৬৮)

অনুশোচনা বোধ থেকে রেহায় পাওয়ার ভয়ানক প্রবিত্তি


কিন্তু মজার বিষয় হচ্ছে মানুষ তার এই অনুশোচনা বোধের কষ্টের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য অদ্ভুত একটি কৌশল প্রয়োগ করতে পারে। সেই কৌশলটি হল তার কৃত ভুলকেই হাজার অজুহাত দেখিয়ে বা নিজেকে পরিস্থিতির শিকার হিসেবে প্রতি প্রমাণ করে ক্রমাগত আত্মসমর্থন দিতে থাকা। ফলস্বর ভুলের দরুন তার মনে যে অনুশোচনা বোধ বা দ্বিতীয়বার ওই একই ফুল করার যে প্রত্যয় জন্ম নেওয়ার কথা ছিল পরিবর্তে জন্ম নেয় আত্মপক্ষ সমর্থনের হাজারো কারণ এবং একই ভুল বারবার করার সুযোগ। সব থেকে ভয়ংকর দিকটি হচ্ছে বারবার একই ভুল করার পর এক সময় সে ভুলের সংজ্ঞাকেই বদলে ফেলতে চায়। ভুল কাজকেই সে সঠিক কাজ রূপে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। ইসলাম কঠোর এবং ন্যায় বিচারক সৃষ্টিকর্তার ধারণাটি প্রতিষ্ঠিত করতে চাই ঠিক এই ক্ষেত্রে। আল কোরআনে বর্ণিত যতগুলো ইহজাগতিক শাস্তির কথা বলা হয়েছে তার প্রতিটি সমাজে একটি ভুল কাজকে প্রতিষ্ঠিত করার শাস্তি। 
ব্যভিচারের মত একটি ঘৃণ্য অপরাদের শাস্তি (মৃত্যু দণ্ড) এক জন মুসলিম শাসক তখনই দিতে পারেন যখন তা সমাজে প্রকাশিত হয়ে পড়ে (নিজ স্বীকারোক্তি বা চার জন সাক্ষীর মাধ্যমে)। অন্য যে অপরাধে মৃত্যু দণ্ড শাস্তি রয়েছে তা হচ্ছে জমিনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা। ইসলাম পরিবার ব্যবস্থ, সমাজ ব্যবস্থা এক কথায় সমষ্টিবাদকে সব থেকে বেশি উৎসাহিত  করে। এবং সমষ্টিবাদকে ভাঙতে পারে কিংবা এর শৃঙ্খলা কে বিনষ্ট করতে পারে এমন প্রতিটি কাজকে কঠোর হস্তে দমন করে। এর জন্যই ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, এর জন্যই প্রতিবেশীর অধিকারের প্রতি এত বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ইসলামের সমষ্টিবাদের এই প্রসঙ্গ নিয়ে পরবর্তী পর্বে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!