ডিজিটাল যুগের অস্ত্র: অসত্য তথ্যের প্রভাব-পর্ব ১

Insightful Ink-walk
0

যুদ্ধ শব্দটি সবসময় আমাদের মনে করিয়ে দেয় অস্ত্রের ঝনঝনানি, মৃত্যু আর একটি বিভীষিকাময় পরিবেশের। যুদ্ধ শব্দটির সাথে সমরাস্ত্রে সরাসরি যোগাযোগ থাকলেও কোন যুদ্ধই প্রকৃতপক্ষে কেবলমাত্র অস্ত্র আর সৈন্যর দ্বারা লড়া হয় না। যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষেত্রে অন্যতম নিয়ামক থাকে কিছু বিচারধারা, কতগুলো সংকল্প এবং পটভূমি। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায় ঘাটলে দেখা যায় যুদ্ধ নামক এই নিশংস মৃত্যু-নৃত্যে নিজ অবস্থানকে বৈধ করার জন্য যুগে যুগে রাজনৈতিক নেতারা বিভিন্ন বিচারধারা এবং প্রেরণার আশ্রয় নিয়েছেন, এমনকি রটনার আশ্রয় নিতেও দ্বিধাবোধ করেননি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পৃথিবীর সাক্ষী হয়েছে এমনই এক অপ্রচারের যার দরুন হিটলার ৬০ লক্ষ ইহুদী হত্যা করাকে পৃথিবীর চোখে বৈধ ও যুক্তিসম্মত বলে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল। শীতল যুদ্ধের সময়ও এমন হাজার অপপ্রচারের সাক্ষী সারা বিশ্ব হয়েছে। কিন্তু বর্তমান সময়ে অস্ত্রবিহীন এই যুদ্ধের কৌশল যেন এক নতুন মাত্রা নিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর স্মার্টফোনের বদলতে যে কোন সঠিক তথ্য, ভুল তথ্য বা গুজব মুহূর্তের মধ্যেই পৃথিবীর কোণে কোণে পৌঁছে যাচ্ছে। এই সকল যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে যুদ্ধে জয়লাভ করার জন্য কেবলমাত্র সূক্ষ্ম নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা সম্পন্ন মিসাইল কিংবা আধুনিক ট্যাংকের ভয়ংকর গুঞ্জনই যথেষ্ট নয়। যুদ্ধে ঠিক কোন পক্ষ কত বেশি সঠিক বা নৈতিক অবস্থানে আছে তা প্রতিষ্ঠা করা ঐ সকল সমরাস্ত্রের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ৭ অক্টোবরের পর থেকে দখলদার ইসরাইলি বাহিনী এবং প্রতিরোধকারী হামাসের আল-কাশেম ব্রিগেডের মধ্যে যে যুদ্ধ শুরু হয়েছে সেখানে স্পষ্টত ভাবেই ইজরায়েলের নৈতিক অবস্থান সারা বিশ্বের কাছেই অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছে। কিন্তু সত্য দিয়ে যখন যুদ্ধের নৈতিক অবস্থান প্রমাণ করা যায় না তখন বিভ্রান্তির জন্ম দেওয়াই চিরচারিত পন্থা। ইসরাইল ও তার আখ্যান প্রতিষ্ঠা করার জন্য বিভ্রান্তির জন্ম দিয়েছে। শুধু এবারই নয়, দশকের পর দশক ধরে দিয়ে আসছে এবং অদ্ভুতভাবে আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো শক্তিশালী ব্যবস্থাগুলো অনেকটা সত্যাখ্যান না করেই ইজরায়েলের সুরে সুর মিলিয়েছে। 


a master weapon of modern warfare

এখানে একটি বিষয় জানা জরুরী যে ইজরাইল একটি দখলদার শক্তি হবার পরেও কিভাবে তাদের আখ্যান দুনিয়ার সামনে প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে। ইসরাইলের প্রোপাগান্ডা যন্ত্রের ছড়ানো বিভ্রান্তি গুলো কেবলমাত্র জাল খবর নয় যে ২-৪জনের মিথ্যা কথা এবং তা নিয়ে কিছু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুঞ্জনেই তা সীমাবদ্ধ থাকবে। এটি একটি সুচিন্তিত কৌশল যার মাধ্যমে ইসরাইল তার সমস্ত অপকর্মের একটি লোক দেখানো নৈতিক পটভূমি তৈরি করতে চেয়েছে। দুঃখজনক হলেও সত্য এই যে যে কোন ঘটনার বর্ণনাকে যে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে সে প্রকৃতপক্ষে ঘটনাকেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ঘটনার এই বিভ্রান্তিমূলক নিয়ন্ত্রণ একটি পুরো সভ্যতা কে শেষ করে দিতে পারে, গণহত্যার পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে এবং পুরো বিশ্বর চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না কারণ বিভ্রান্তি দিয়ে তার বৈধতা অনেক আগেই আমাদের মনে গেঁথে দেওয়া হয়েছে।  

শুধু ইসরাইলই নয়, আপনি বিশ্বের যে কোন কর্তৃত্ববাদী সরকার বা সংস্থার মাঝেই বিভ্রান্তির এই অস্ত্রের ব্যবহার দেখতে পাবেন। এখন প্রশ্ন আসে সরকার বা সংস্থার দ্বারা এই বিভ্রান্তি ছড়ানোর উদ্দেশ্য বা কৌশল গুলো কি কি? যদি সাধারণভাবে দেখা অপপ্রচার বা বিভ্রান্তি ছড়ানোর তিনটি উদ্দেশ্য রয়েছে।
প্রথমত, প্রতিপক্ষকে অসম্মান করা বা তাদের উদ্দেশ্যকে মূল্যহীন কিংবা কলঙ্কিত করা। প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে এত বেশি অপপ্রচার করা যে তারা চিৎকার করে, দৃশ্যত প্রমাণ উপস্থিত করে সত্য বললেও কেউ তা বিশ্বাস না করে।
দ্বিতীয়ত, প্রতিপক্ষকে ইতিহাসের পাতা থেকে মুছে ফেলা। যুগের পর যুগ ধরে প্রতিপক্ষের অবস্থান এমনকি অস্তিত্বকেও অপ্রসঙ্গিক প্রতিমান করে শুধুমাত্র "আমরা ভুক্তভোগী" এই বর্ণনাকে ইতিহাসের পাতায় প্রতিষ্ঠিত করা।
তৃতীয় এবং সব থেকে ভয়ংকর উদ্দেশ্যটি হচ্ছে প্রতিপক্ষকে অমানবিক, পশুর সমান প্রমাণ করা। এটি সবথেকে ভয়ংকর কারণ আপনি যদি প্রমাণ করতে পারেন আপনার প্রতিপক্ষ মানুষই না তবে মানবাধিকারের প্রসঙ্গত এমনিতেই মুছে ফেলা যায় এবং নৃশংস গণহত্যাও বৈধ হয়ে যায়। 

পরবর্তী পর্বে পরিসংখ্যান এবং ইতিহাস দিয়ে ব্যাখ্যা করব কীভাবে এই ভুল তথ্য, বিভ্রান্তিমূলক প্রচারণা দেশে দেশে; বিশেষ করে ইসরাইলই ও এর পক্ষাবলম্বী দেশ গুলোতে চলছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!