ফিলিস্তিনিদের ঈমানী বিশ্বাসে দৃঢ়তার কবচ: বিশ্বাসের অগ্নিকুণ্ডে সহনশীলতার গল্প

Insightful Ink-walk
0

 ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতের দীর্ঘদিনের ইতিহাস জুড়ে আমরা এক অবিচল সত্যতা উপলব্ধি করি আর তা হলঃ কঠোর কষ্ট নির্যাতনের মধ্যেও ফিলিস্তিনের জনগণের ঈমান অটুট থাকা, আপনজনকে হারিয়েও আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা প্রদর্শন। ফিলিস্তিনের মাটিতে নিরন্তর গর্জে ওঠে গোলাবর্ষণের শব্দ যা সে দেশকে গ্রাসকারী অস্থিরতার এক নিরব সাক্ষী। কিন্তু ধ্বংসস্তুপের মাঝে থেকেই উঠে আসে আস্থার গভীর শক্তি। এটি শুধু বেঁচে থাকার গল্প নয়; এটি ফিলিস্তিনের জীবনের রেশমিতে গাঁথা এক অসাধারণ সহনশীলতার সাক্ষ্য। এই লেখাটির উদ্দেশ্য হলো ফিলিস্তিনিদের দৃঢ় ঈমানের কারণগুলোকে বোঝার চেষ্টা করা। আমরা বোঝার চেষ্টা করব বোমা-হুমকির মধ্যে থেকেও কিভাবে ফিলিস্তিনীরা নিজেকে অবিচল রাখার শক্তি অর্জন করেছে, কিভাবে সব কিছু হারিয়েও তারা আল্লাহকে দোষী না করে নিজের ভাগ্যকে আস্থার সাথে মেনে নেওয়ার মানসিকতা গড়তে পেরেছে।


(toc) #title=(বিষয় বস্তু)

 

the faith of the Palestinians

ফিলিস্তিনিদের ঈমানের শক্তি


ফিলিস্তিনিদের জীবনে ঈমান, শুধু মসজিদের মিনারে উঠে আল্লাহু আকবার ডাকার মতো এত সহজ নয়। এটি তাদের রক্তে, তাদের ইতিহাসে, তাদের বীরত্বের গানে মিশে আছে। এটি তাদের দুঃখের অন্ধকারে আলোর চমক, তাদের সংগ্রামের রণক্ষেত্রে ঢাল, তাদের অতীতের গর্ব ও ভবিষ্যতের আশা। এখানে আল্লাহর দয়া, তাঁর কালাম প্রতি কানে, তাঁর আলো প্রতি আত্মায় - এটাই ফিলিস্তিনের হৃদয়, তাদের ঈমানের শক্তিশালী উৎস। ইসলামের হাওয়া তাদের জীবনে বয়ে যায়, প্রতি নামাজে, প্রতি দু'আয়, তাদের শাহাদাহর প্রতিশ্রুতি তাদের ক্রিয়ায় মূর্ত্তিমান হয়। দুনিয়ার জীবন তুচ্ছ, পরকালই চিরন্তন - এই বিশ্বাস তাদের দুঃখের অন্ধকারে আশার দীপ জ্বালিয়ে রাখে। আল্লাহর ইচ্ছায় শিরোনত, তাঁর নিয়তিতে বিশ্বাস - এটাই তাদের তাকদীর, নিষ্ঠুর বাস্তবতার মধ্যেও দৃঢ়তার কবচ।


শাহাদাতের ধারণা ও ফিলিস্তিনের অটুট মায়েরা


যে মা'রা একদিন পরম মমতায় ঘুমন্ত শিশুদের দেখতেন, তারাই এখন শাহাদাতের ধারণায় সান্ত্বনা খুঁজে পান। তারা জানেন, তাদের প্রিয়জনরা উচ্চতর দুনিয়ায় আরোহণ করেছেন। বেদনা স্পষ্ট, কান্নাও ঝরে, কিন্তু তাদের কণ্ঠস্বর অবিচল, আত্মা অটুট। এই দৃঢ় সংকল্প আসে ঐশ্বরিক বিচারের গভীর বিশ্বাস থেকে, যেখানে দুঃখান্ত শেষ নয়, বরং চিরস্থায়ী পুরস্কারের পথ। তাদের দৃঢ় ইমানের কাছে মৃত্যুর ধারণাই তার তীক্ষ্ণতা হারিয়ে ফেলে। তাদের কাছে মৃত্যু কেবল অন্ধকারে বিলীন নয়, বরং জান্নাতের দ্বার, আল্লাহর অসীম দয়ার আশ্রয়ে প্রিয়জনদের সঙ্গম। এই দৃঢ় বিশ্বাসই ফিলিস্তিনিদের মাথা উঁচু করে হাঁটতে দেয়, প্রতিটি বোমা-হুমকির মুখোমুখি দাঁড়াতে সাহস দেয় এক শান্ত মর্যাদার সঙ্গে, যা ভীতিকে অতিক্রম করে। তাদের বিশ্বাস কোনো অন্ধ বিশ্বাস নয়, বরং অধ্যবসায়ের সঙ্গে, জীবন বাস্তবতায় অধ্যয়ন করা পথ। তারা শক্তি পান নবী মুহাম্মদের (ﷺ) দৃঢ় সংকল্প, তার জীবনে দুঃখ গ্রহণের পদ্ধতি, এবং ঈশ্বরের চূড়ান্ত পরিকল্পনায় তার অটুট বিশ্বাস থেকে। তাদের বিশ্বাস কোরআন দ্বারা লালিত, যার আয়াতগুলি চরম অন্ধকারে একটি নির্দেশক আলো।

মহান বিচারকের প্রতি বিশ্বাস


তারা জানে পার্থিব কোন আদালত তাদের বিরুদ্ধে ঘটা এই নির্যাতনের শাস্তি দিতে অক্ষম, তবে বিচার তারা অবশ্যই পাবেন মহান বিচারকের কাছে থেকে। তারা এই জগতের বাইরে একটি বিচারে বিশ্বাস করে, যেখানে মহান বিচারক সকল বিচারের কাজকে নিখুঁত নির্ভুলতার সাথে করবেন। শেষ বিচারের দিনে প্রতিটি অন্যায় হত্যার দ্বায় অত্যাচারীর নিকট জাহান্নামের তীব্র আগুন হয়ে ফিরে আসবে। এই অটুট বিশ্বাস তাদের বর্ম, তাদের হতাশার বিরুদ্ধে ঢাল।


ফিলিস্তিনিদের সহনশীলতা ও আমাদের শিক্ষা


বিশ্ব তাদের দুঃখের সাক্ষী হলেও, ফিলিস্তিনিরা আমাদের একটি শক্তিশালী শিক্ষা দেয়। তারা আমাদের জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য ও উপভোগের ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করে, আমাদের পার্থিব জগতের বাইরে একটি উচ্চতর উদ্দেশ্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। তাদের সহনশীলতা আমাদের চিত্তপ্র্রসাদ সম্পন্ন জীবনের চাহিদাকে চ্যালেঞ্জ করে, এবং আমাদের নিজস্ব অগ্রাধিকার পুনর্বিবেচনা করার আহ্বান জানায়। তাদের গল্প শুধু তদেরই নয়; এটি বিশ্বাস ও সহনশীলতার একটি সার্বজনীন গল্প। এটি আমাদের নিজস্ব মূল্যবোধকে প্রশ্ন করতে, আমরা যা মূল্যবান মনে করি তা পুনর্মূল্যায়ন করতে বাধ্য করে। এটি আমাদের নিজস্ব অভ্যন্তরীণ শক্তি খুঁজে পেতে এবং সাহস ও মার্জনা দিয়ে আমাদের নিজস্ব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখোমুখি দাঁড়াতে অনুপ্রাণিত করে।


ফিলিস্তিনিদের দৃঢ়তার উৎস


ফিলিস্তিনিদের ঈমানের গল্পটি শুধুমাত্র সংগ্রামের গল্প নয়। এটি আশার গল্পও। কারণ আল্লাহর প্রতি তাদের দৃঢ় বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়া হয়েছে এক আশার মিনার, যা তাদেরকে সবচেয়ে কঠিন ঝড়েও মাথা উঁচু করে রাখতে সাহায্য করে। এই আশাটি মসজিদের মিনার থেকে আজানের ডাকে ধ্বনিত হয়, যা প্রতিদিন সকালে ঘোষণা করে যেনতুন দিন, নতুন সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে”। এটি শিশুদের চোখের হাসিতে ঝলমলে, যারা নিরীহতার শক্তিতে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখে। এটি বৃদ্ধদের দু'আয় গুঞ্জমান, যারা অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে শিখেছে যে আল্লাহর ইচ্ছায় শেষ পর্যন্ত সব দুঃখের অবসান ঘটবে। ফিলিস্তিনিদের আশা তাদের সংগ্রামের প্রতিরূপ নয়, বরং তার বিপরীত। এটি তাদের অসহায়ত্বকে স্বীকার করে না, বরং তাদের শক্তিকে উদযাপন করে। এটি তাদের জখমগুলোকে উপেক্ষা করে না, বরং সেগুলো থেকে শিখে তাদেরকে আরো শক্তিশালী করে তোলে। ঈমানই ফিলিস্তিনিদের ঢাল, অচলা দুর্গ। কিন্তু এই দুর্গের দেয়াল শুধুমাত্র ধর্মের তাত্ত্বিক শিক্ষা দিয়ে গড়া হয়নি। এর ভিত্তি গঠন করেছে তাদের জীবনের প্রতিক্ষেত্রই ধর্মের শিক্ষার বাস্তবিক প্রয়োগের মাধ্যমে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)

#buttons=(Ok, Go it!) #days=(20)

Our website uses cookies to enhance your experience. Check Now
Ok, Go it!