প্রগতিশীলতা ও ধর্মের মধ্যে পার্থক্য একটি বিতর্কিত বিষয়। প্রগতিশীলতা হল একটি সামাজিক ও রাজনৈতিক আদর্শ যেখানে ব্যক্তি স্বাধীনতা, সমতা ও ন্যায়বিচারের উপর জোর দেওয়া হয়। ধর্ম হল একটি বিশ্বাস ব্যবস্থা যেখানে উচ্চতর সত্তার অস্তিত্বে বিশ্বাস করা হয়। তবে সাধারন ভাবে প্রগতির সবথেকে বড় অন্তরায় হিসেবে যে ধারণাটি কে সবথেকে বেশি দায়ী করা হয় তা হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধ। ধর্ম বা প্রগতিশীলতার নামে যারা ঘৃণা ছড়ানো তাদের নিয়ে আলোচনা না করাই ভালো ধর্মের নামেও যারা ঘৃণা ছড়ান তাদের সাথেও তর্ক না করাই ভাল। তবে সমালোচকের দৃষ্টিকোণ থেকে আমার বক্তব্যতো উপস্থাপন করাই যাই।
সফলতার সংজ্ঞাতে প্রগতিশীলতা
প্রগতিশীলতা এবং ধর্মীয় মূল্যবোধের মূল পার্থক্য টা আসে সফলতার সংখ্যার মাধ্যমে। প্রগতিশীলতা আপনাকে কেবল অর্জনের মাহাত্ম্য শেখাবে, শেখাবে এ কিভাবে মোটিভেশন নিয়ে চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছানো যায়। আপনার সমস্ত কষ্ট, অধ্যবসায় এবং অক্লান্ত পরিশ্রমের পর যদি আপনি চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাতে না পারেন তাহলে আপনাকে কেবল ব্যার্থ মানুষ হিসেবেই দেখা হবে। আপনার কষ্টের মূল্য কেবল লোকদেখানো সান্তনা। এমনকি আপনার কষ্টের পথ ধরে ভবিষ্যতে যদি কারো কোন উপকার হয় তবুও আপনি কেবল থাকবেন ফুটনোট হিসেবে। উদাহারন জানতে চান? আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেসের সম্পর্কে পড়তে পারেন। বিংশ শতাব্দীর সব থেকে আলোচিত বিবর্তন তত্ত্বের ব্যাপারে তার অবদান ফুটনোট হিসেবেই থেকে গিয়েছে। আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস স্বাধীনভাবে চার্লস ডারউইনের মতো একই সময়ে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে বিবর্তনের তত্ত্ব তৈরি করেছিলেন। তিনি একজন প্রকৃতিবিদ ছিলেন যিনি অধ্যয়ন করেছিলেন কীভাবে উদ্ভিদ এবং প্রাণীরা তাদের পরিবেশের সাথে খাপ খায়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ম্যালেরিয়া থেকে পুনরুদ্ধার করার সময়, ওয়ালেস ডারউইনকে তার ধারণার রূপরেখা দিয়ে একটি চিঠি পাঠান। এটি ডারউইনকে ১৮৫৯ সালে তার যুগান্তকারী কাজ "অন দ্য অরিজিন অফ স্পিসিস" প্রকাশ করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। দুর্ভাগ্যবশত, ওয়ালেসের অবদানগুলিকে ফুটনোট হিসেবেই রেখে দেওয়া হয়েছিল, এবং বিবর্তন সম্পর্কে আলোচনায় তাকে প্রায়ই ভুলে যাওয়া হয়।
সফলতার সংজ্ঞাতে ধর্ম
এই পার্থক্যটিকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য, আমরা একটি উদাহরণ বিবেচনা করতে পারি। ধরুন, একজন ব্যক্তি একটি বড় কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ পদে চাকরি পাওয়ার জন্য অনেক পরিশ্রম করে। তিনি দিন-রাত পড়াশোনা করেন, বিভিন্ন কোর্স করেন, এবং ইন্টার্নশীপ করেন। অবশেষে, তিনি সেই পদে চাকরি পান। প্রগতিশীল দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ব্যক্তিটি সফল কারণ তিনি তার লক্ষ্য অর্জন করেছেন। কিন্তু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ব্যক্তিটি কি সত্যিই সফল? তিনি যদি শুধুমাত্র পদটি অর্জন করার জন্য পরিশ্রম করে থাকেন, তাহলে তিনি কি সত্যিই একজন সফল মানুষ? ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে, এই ব্যক্তিটি সত্যিকার অর্থে সফল হবেন যদি তিনি সেই পদে চাকরি পাওয়ার জন্য যে প্রচেষ্টা করেছেন, সেই প্রচেষ্টার মূল্য দিতে পারেন। অর্থাৎ, তিনি যদি সেই পদে চাকরি পেয়েও একজন ভালো মানুষ হিসেবে থেকে থাকেন, তাহলে তিনি সত্যিকার অর্থে সফল।